মোবাইলের ডিসপ্লে ঠিক করতে কত টাকা লাগে। স্যামসং/ ভিভো /অপ্পো /রিয়েলমি/রেডমি

 

মোবাইলের ডিসপ্লে ঠিক করতে কত টাকা লাগে: একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ

মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, যেমন ফোনের নেভিগেশন, ছবি দেখা, ভিডিও দেখা, এবং অন্যান্য কার্যক্রম। ডিসপ্লে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং কখনও কখনও ফোনের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। এই আর্টিকেলে মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামত করতে কত টাকা লাগে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

১. ডিসপ্লে মেরামতের প্রকারভেদ

মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামতের জন্য বিভিন্ন প্রকারের কাজ করা হতে পারে, এবং প্রত্যেক প্রকারের জন্য খরচ ভিন্ন হতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ প্রকার উল্লেখ করা হলো:

১.১ স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: যদি ডিসপ্লে ভেঙে যায় বা স্ক্রীনে বড় দাগ পড়ে যায়, তবে সম্পূর্ণ স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। এটি সাধারণত ব্যয়বহুল।

১.২ LCD রিপ্লেসমেন্ট: কিছু ক্ষেত্রে, স্ক্রীনের উপরের গ্লাস ঠিক থাকলেও LCD প্যানেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র LCD রিপ্লেসমেন্ট করা হয়।

১.৩ টাচ স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: কখনও কখনও টাচ স্ক্রীন কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য শুধুমাত্র টাচ প্যানেল পরিবর্তন করা হতে পারে।

২. মেরামতের খরচের বিভিন্নতা

মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামতের খরচ বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে:

২.১ ফোনের ব্র্যান্ড: ফোনের ব্র্যান্ডের উপর ভিত্তি করে মেরামতের খরচ পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, Apple বা Samsung-এর মতো প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ফোনের ডিসপ্লে মেরামত করার জন্য বেশি খরচ হয়।

২.২ মডেল: একই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের ডিসপ্লে মেরামত খরচ ভিন্ন হতে পারে। কিছু মডেলের ডিসপ্লে সহজে পাওয়া যায়, আবার কিছু মডেল কষ্টসাধ্য।

মোবাইলের  তিনটি প্রকারের ডিসপ্লে পাওয়া যায় একটি হলো এলসিডি , অ্যামোলেড , POLED. এর মধ্যে অ্যামোলেড ডিসপ্লে আর POLED এর দামটি একটু বেশি এবং এলসিডি ডিসপ্লের দামটি অনেকটাই কম। উদাহরণস্বরূপ যেমন একটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে দাম যদি হয় পাঁচ হাজার টাকা তাহলে এই LCD ডিসপ্লের দাম হবে আর ২ হাজার টাকা।

২.৩ সার্ভিস সেন্টার: অফিশিয়াল সার্ভিস সেন্টার এবং স্থানীয় দোকানে মেরামতের খরচও ভিন্ন হতে পারে। অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার সাধারণত বেশি চার্জ করে।

৩. ডিসপ্লে মেরামতের সম্ভাব্য খরচ

এখন আমরা কিছু সাধারণ মোবাইল ডিসপ্লে মেরামতের কত টাকা লাগে খরচের ধারণা দেব:

৩.১ সাধারণ ফোন:

  • স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: ৩,০০০ - ৬,০০০ টাকা
  • LCD রিপ্লেসমেন্ট: ২,০০০ - ৫,০০০ টাকা
  • টাচ স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: ১,৫০০ - ৩,৫০০ টাকা

৩.২ প্রিমিয়াম ফোন (যেমন iPhone, Samsung Galaxy):

(মোবাইলের সার্ভিস সেন্টারে গেলে এই রকমের টাকা লাগবে কিংবা অরিজিনাল ডিসপ্লে যদি লাগাতে চান তাহলে কিন্তু এইরকম বেশি টাকা লাগবে)

  • স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: ৮,০০০ - ১৫,০০০ টাকা
  • LCD রিপ্লেসমেন্ট: ৬,০০০ - ১২,০০০ টাকা
  • টাচ স্ক্রীন রিপ্লেসমেন্ট: ৫,০০০ - ১০,০০০ টাকা

( নরমালি যদি আপনি রিপেয়ার সপে যান এবং ডুপ্লিকেট ডিসপ্লে লাগান তাহলে কমসেকম 1500 থেকে 2000 মধ্যে পুরো যেকোনো মোবাইলে ডিসপ্লে আপনি পেয়ে যাবেন )

৪. মেরামতের জন্য প্রস্তুতি

ডিসপ্লে মেরামত করতে যাওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত:

৪.১ ডেটার ব্যাকআপ: মেরামতের প্রক্রিয়ায় ফোনের তথ্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই, ব্যাকআপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪.২ সার্ভিস সেন্টার নির্বাচন: ভালো মানের সার্ভিস সেন্টার নির্বাচন করুন। অনেক সময় স্থানীয় দোকানে মেরামত করলে মানের সমস্যা হতে পারে।

৪.৩ ওয়ারেন্টি চেক করুন: যদি ফোনের ওয়ারেন্টি এখনও বৈধ থাকে, তাহলে ডিসপ্লে মেরামতের জন্য সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করুন। এতে খরচ কমে যেতে পারে।

৫. ডিসপ্লে মেরামতের সুবিধা ও অসুবিধা

৫.১ সুবিধা:

  • ব্যবহারযোগ্যতা: ডিসপ্লে মেরামত হলে ফোন পুনরায় স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করা যায়।
  • অর্থ সাশ্রয়: নতুন ফোন কিনার চেয়ে মেরামত অনেক কম খরচে হয়।

৫.২ অসুবিধা:

  • মেরামতের সময়: কিছু ক্ষেত্রে মেরামত হতে অনেক সময় লাগতে পারে।
  • গুণগত মান: স্থানীয় দোকানে মেরামতের ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত নাও হতে পারে।

৬. ডিসপ্লে মেরামতের পরিবর্তনীয়তা

মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামতের প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তনীয়তা থাকতে পারে:

৬.১ DIY (Do It Yourself): কিছু ব্যবহারকারী ডিসপ্লে নিজে মেরামত করার চেষ্টা করে। তবে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ত্রুটির সম্ভাবনা থাকে।

৬.২ সেকেন্ড হ্যান্ড পার্টস: কিছু লোক সেকেন্ড হ্যান্ড ডিসপ্লে ব্যবহার করে খরচ কমানোর চেষ্টা করে। তবে এটি গুণগত মানের সমস্যার কারণ হতে পারে।

৭. উপসংহার

মোবাইলের ডিসপ্লে মেরামত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, এবং এর খরচ ব্র্যান্ড, মডেল, এবং সার্ভিস সেন্টারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। গুণগত মানের জন্য সঠিক সার্ভিস সেন্টার নির্বাচন করা, ডেটার ব্যাকআপ নেওয়া এবং ওয়ারেন্টি চেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিসপ্লে মেরামতের মাধ্যমে ফোনের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাজনক।

মোবাইল ডিসপ্লের যত্ন নেওয়া এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা এই ধরনের সমস্যাগুলি এড়াতে সহায়ক। এটি আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই যত্ন নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় মেরামতের দিকে নজর রাখা উচিত।

মন্তব্যসমূহ